Friday, September 30, 2016

মাযহাব কি?কুরআন হাদীস ও চার ইমামদের দৃষ্টিতে মাযহাব



 মাযহাব কি?

কুরআন হাদীস চার ইমামদের দৃষ্টিতে মাযহাব

বর্তমানে  সারাবিশ্বে  মুসলমানের  সংখ্যা  প্রায় আড়াইশো  কোটিরও বেশী। পৃথিবীর প্রত্যেক তিনজন ব্যাক্তির মধ্যে একজন মুসলমান। অমুসলিমদের কাছে আমরা অর্থাৎ ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মুসলমান বলে পরিচিত হলেও মুসলিমরা নিজেদের মধ্যে অনেক নামে পরিচিত। যেমন, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী প্রভৃতি। এই নাম গুলি আল্লাহ বা মুহাম্মাদ (সা) এর দেওয়া নয় এমনকি যাঁদের নামে এই মাযহাব তৈরি করা হয়েছে তারাও এই নাম গুলো দেয়নি। মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত চারটি মাযহাব, দল বা ফিকাহ ইসলামের কোনো নিয়ম বা বিধান মেনে তৈরি করা হয়নি। কারন ইসলাম ধর্মে কোনো দলবাজী বা ফিরকাবন্দী নেই। মুসলমানদের বিভক্ত হওয়া থেকে এবং ধর্মে নানা মতের সৃষ্টি করা থেকে কঠোরভাবে সাবধান করা হয়েছে। এই মাযহাবগুলো রসুল (যা) এবং সাহাবাদের (রা) সময় সৃষ্টি হয়নি। এমনকি ঈমামগনের সময়ও হয়নি। চার ইমামের মৃত্যুর অনেক বছর পরে তাঁদের নামে মাযহাব তৈরি হয়েছে। কোরআন হাদীস চার ইমামের দৃষ্টিতে মাযহাব কি, কেন, মাযহাব কি মানতেই হবে, মাযহাব মানলে কি গোনাহ হবে, সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ্‌!

মাজহাব মানা কি ফরজ?? জানতে হলে পড়ুন

"বেশ কিছু মানুষ বলেমাজহাব মানা ওয়াজিব বা ফরজ।  যাক আসুন মূল কথায় যাই
=> আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সাথে সব সময় সব সাহাবী থাকতেন না। কেউ নবীর (সাঃ) থেকে একটা হাদিসের বাণী শুনলে সেটা পৌছে দিতেন অন্যের নিকট। যেমন আবু হুরাইরা রাঃ নবীজি (সাঃ) এর অনেক বাণী পৌছে দিয়েছেন অন্যান্য সাহাবীদের নিকট। যেমন বিদায় হজ্বের সময় লাখেরও বেশী সাহাবী ভাষন শ্রবণ করেছেন। পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়েছেন
=> ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেছেন ৮০ হিজরীতে। তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর যতগুলো হাদিস পেয়েছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই ফতোয়া দিয়েছিলেন। একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, উনার সময় তিনিই ছিলেন ইমামে আজম তবে যেহেতু তিনি সকল সাহাবাদের হাদিস সংগ্রহ করতে পারেন নাই, সকল সাহাবাদের সাক্ষাত পান নাই এবং যেহেতু হাদিস এর ধারক সাহাবারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন তাই তিনি যতগুলো হাদিস পেয়েছেন তার উপরেই ফতোয়া দিয়েছেন ওনাদের সময় সহীহ হাদীস সংকলন করা ছিল না তাই বেশীর ভাগ সমস্যাই ইজমা-কেয়াস আর যুক্তি দ্বারা সমাধান করতেন। অবশেষে সংকটময় অবস্থায় চার ইমাম সাহেবই নিজ নিজ অনুসারীদেরকে বলে যান, “আমি যে ফয়সালা দিয়েছি ভবিষ্যতে যদি সহীহ হাদীস সংকলিত হয় এবং আমার ফয়সালা সহীহ হাদীসের পরিপন্থী হয়, তা হলে আমার ফয়সালা পরিত্যাগ করে সহীহ
হাদীসের অনুসরণ করবে।

মাযহাব তৈরিতে আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞা:
মুসলমানেরা যাতে বিভিন্ন দলে আলাদা বা বিভক্ত না হয়ে যায় সে জন্য আল্লাহ পাক আমাদের কঠোরভাবে সাবধান করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা কুরআনের সূরা আন-আমর এর ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলেছেনযারা দ্বীন সন্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন, দলে বিভক্ত হয়েছে হে নবী! তাদের সাথে তোমার কোনও সম্পর্ক নেই; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে অবগত করবেন। একটু থামুন। উপরের আয়াতটা দয়া করে বারবার পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন, চিন্তা করুন। আল্লাহ তাআলা সরাসরি বলেছেন যারা দ্বীন বা ধর্মে অর্থাৎ ইসলামে নানা মতগের সৃষ্টি করেছে এবং বিভক্ত হয়েছে, তাদের সাথে আমাদের নবী মহাম্মাদ (সা) এর কোনো সম্পর্ক নেই। যার সাথে নবীজীর (সা) কোনো সম্পর্ক নেই সে কি মুসলমান? সে কি কখনো জান্নাতের গন্ধও পাবে। আমরা মুসলমান কোরআন হাদীস মাননে ওয়ালা এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। আল্লাহ বলেন এবং তোমাদের এই যে জাতি, এতো একই জাতি; এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক, অতএব আমাকে ভয় করো। (সূরা মুউমিনুন ২৩/৫২) তাহলেই বুঝতেই পাড়ছেন ফরয, ওয়াজীব ভেবে আপনারা যা মেনে চলছেন আল্লাহ তা মানতে কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন তবে শুধু এইটুকুই নয় আল্লাহ আরও অনেক আয়াতে ব্যাপারে মানুষকে সাবধানবানী শুনিয়েছেন। যেমন সূরা রূমের একটি আয়াত দেখুন যেখানে আল্লাহ পাক বলছেন ‘….. তোমরা সকল মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা নিজেদের দ্বীনকে শতধা বিচ্ছিন্ন করে বহু দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়ে খুশি’ – (সূরা রুম ৩০/৩১-৩২) বর্তমানে আমাদের সমাজের অবস্থাও মুশরিকদের মতো। ইসলামকে তারা (মাযহাবীরা) বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছে এবং তাদের নিজেদের কাছে যা আছে তা নিয়েই তারা খুশি। তাদের সামনে কোনো কথা উপস্থাপন করলে তারা বলেনা যে কুরআন হাদীসে আছে কি না। তারা বলে আমাদের ইমাম কি বলেছে। এরা কুরয়ান হাদীসের থেকেও ইমামের ফিকাহকে অধিক গুরুত্ব দেয়। অথচ ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে কুরআন হাদীস। তা ছাড়া অন্য কিছু নয়। উপরের আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদের উপদেশ দিয়েছেন তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; তোমরা ইসলামে মাযহাবের সৃষ্টি করো না। অথচ আমরা কুরআনের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে দ্বীনে দলের সৃষ্টি করেছি এবং নিজেকে হানাফী, মালেকী বা শাফেরী বলতে গর্ব অনুভব করছি। আল্লাহ বলেনহে ইমানদারগন তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূলের সামনে অগ্রগামী হয়ো না, এবং আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী (সূরা হুরুরতে/০১) আমার প্রিয় মাযহাবী ভাইয়েরা! এরকম কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশ জানার পরও কি আপনারা মাযহাবে বিশ্বাসী হবেন এবং নিজেকে মাযহাবী বলে পরিচয় দেবেন। যারা জানে না তাদের কথা আলাদা। আল্লাহ বলেনবলো, যারা জানে এবং যারা জানেনা তারা কি সমান? (সূরা যুমার ৩৯/০৯) তাই আজই তওবা করে সঠিক আব্বীদায় ফিরে আসুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার তোফিক দিন। আমীন!
ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি:
ভারতবর্ষের বিখ্যাত হাদীসশাস্ত্রবিদ হানাফীদের শিক্ষাগুরু যাকে হানাফীরা ভারতবর্ষেরইমাম বুখারীবলে থাকেন সেই শাহ আলিউল্লাহ মুহাদ্দিসদেহেলভী (রহ) বলেছেন – ‘লাম আন্না না-সা-কা-নু ক্কারলাল মিআতির রা-বিআতি গাইরা মুজমিয়ীনা আলাত্‌-তাকলীদিল খা-লিস লিমায় হাবিন্ওয়া-হিদিন্বি-আইনিহীঅর্থাৎ তোমরা জেনে রাখো যে, ৪০০ হিজরীর আগে লোকেরা কোন একটি বিশেষ মাযহাবের উপর জমে ছিল না’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ; ১৫২ পৃষ্ঠা) অর্থাৎ ৪০০ হিজরীর আগে নিজেকে হানাফী, শাফেরী বা মালেকী বলে পরিচয় দিতো না। আর চারশো হিজরীর অনেক আগে ইমামরা ইন্তেকাল করেন। ইমামদের জন্ম মৃত্যুর সময়কালটা একবার জানা যাক তাহলে ব্যাপারটা আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে
ইমামের নাম  জন্ম  মৃত্যু
আবু হানীফা (রহ) ৮০ হিজরী ১৫০ হিজরী
ইমাম মালেক (রহ) ৯৩ হিজরী ১৭৯ হিজরী
ইমাম শাফেয়ী (রহ) ১৫০ হিজরী ২০৪ হিজরী
আহমদ বিন হাম্বাল (রহ) ১৬৪ হিজরী ২৪১ হিজরী
বিশিষ্ট হানাফী বিদ্বান শাহ ওলিউল্লাহ দেহেলভী (রহ) এর কথা যদি মেনে নেওয়া যায় যে ৪০০ হিজরীর আগে কোনো মাযহাব ছিল না, এবং ৪০০ হিজরীর পরে মানুষেরা মাযহাব সৃষ্টি করেছে, তার মানে এটা দাঁড়ায় যে আবু হানীফার ইন্তেকালের ২৫০ বছর পর হানাফী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম মালেকের ইন্তেকালের ২২১ বছর পর মালেকী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। ইমাম শাফেরীর ইন্তেকালের ১৯৬ বছর পরে শাফেরী মাযহাব এবং ইমাম আহমাদের ইন্তেকালের ১৫৯ বছর পর হাম্বলী মাযহাব সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ ইমামদের জীবিত অবস্থায় মাযহাব সৃষ্টি হয়নি। তাঁদের মৃত্যুর অনেকদিন পরে মাযহাবের উদ্ভব হয়েছে। আর একবার চিন্তা করে দেখুন মাযহাব বা দল সৃষ্টি করাতে কোরআন হাদিসে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহামান্য ইমামরা ছিলেন কোরআন হাদীসের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসারী এবং ধর্মপ্রান মুসলিম। তাঁরা কি কোরআন হাদীসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মাযহাব তৈরি করবেন যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এটা কখনো হতে পারে? যারা বলে ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেছেন তারা হয় মুর্খ নয় বেইমান। তারা ইমামদের প্রতি অপবাদ দেয়
মাযহাব সৃষ্টি হল কিভাবে:
ফারসীতে একটি প্রবাদ আছেমান তোরা হাজী গো ইয়াম তু মোরা হাজী বোগোঅর্থাৎ একজন লোক আর একজনকে বলছে, ভাই! যদিও তুমি হাজী নও তথাপি আমি তোমাকে হাজী সাহেব বলছি এবং যদিও আমি হাজী নই তুমি আমাকে হাজী সাহেব বলো। এভাবে একে অপরকেহাজী সাহেব বলে ডাকার ফলে আমরা দু-জনেই হাজী সাহেব হয়ে যাবো। এভাবেই আবু হানীফার অনুসারীদের অথবা তাঁর ফতোয়া মান্যে ওয়ালাদের অন্যেরা হানাফী একইভাবে ইমাম মালেকের ফতোয়া মাননে ওয়ালাদের মালেকী বলে ডাকাডাকির ফলে মাযহাবের সৃষ্টি হয়েছে। আজ যা বিরাট আকার ধারন করেছে। আবু হানীফা (রহ) বা তাঁর শিষ্যরা কখনো বলেননি আমাদের ফতোয়া যারা মানবা তারা নিজেদের পরিচয় হানাফী বলে দিবা। অথবা ইমাম মালেক বা শাফেয়ীও বলে যাননি যে আমার অনুসারীরা নিজেকে মালেকী বা শাফেয়ী বলে পরিচয় দিবা। ইমামরা তো বটেই এমনকি ইমামদের শাগরেদরা কিংবা তাঁর শাগরেদদের শাগরেদরাও মাযহাব সৃষ্টি করতে বলেননি। যখন আমাদের মহামতি ইমামরা মাযহাব সৃষ্টি করেননি এবং করতেও বলেননি তখন উনাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার অধিকার কেন দিল?

মাযহাবী ফিকহের কিতাবগুলো বড়ই রহস্যময়!

কিছু কিছু বিজ্ঞ ইসলামী গবেষকের মতে বৃটিশর গোয়েন্দারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই কুরআন বিকৃত করার চেষ্টা করে সফল হয় নি (মুসলমানদের বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে) পরে তারা অনেক জাল হাদীস তৈরী করে বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের মধ্যে সুকৌশলে এড করে। এবং বিভিন্ন ফিকহের কিতাব তৈরী অথবা বিকৃত করে ওদের অনুগত আলেম দ্বারা বা নিজেরা করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ বা বিভক্তি তৈরী করে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ফিকহের কিতাবগুলোতে কুরআন বিরোধী বিভিন্ন কথা থাকায়। তাছাড়া ফিকহের কিতাবগুলোর লেখার সঠিক ইতিহাস কি তা জানা দূরহ। সবকিছু কেমন যেন তাল গোলে!

হানাফি মাজহাবের মুল কিতাব (আল মুখতাসারুল কুদুরী)-

লেখকের নাম আবুল হাসান,পিতার নাম আহমাদ।কুদুরী নামেও পরিচিত।হারি পাতিলকে বলা হয় কুদুর। আর হারি পাতিলের ব্যবসায়ীকে বলা হয় কুদুরী।সম্ভবত গ্রন্থকার হারি পাতিলের ব্যবসায়ী ছিলেন বলে তাকে কুদুরী বলা হত।

তিনি জন্মগ্রহন করেছেন 362 হিজরীতে। মৃত্যুবরণ করেন 428 হিজরীতে।

গ্রন্থখানী তিনি নিজ হাতে লিখেন নাই।কিতাবের শুরুতে লিখিত আছে যে আবুল হাসান বলেছেন-এতে প্রমান হয় যে,আবুল হাসান 12 হাজার মাসআলাহ বলেছেন,অন্য কেউ তা লিপিবদ্ধ করেছেন।অতঃপর ওই লিপিবদ্ধ গ্রন্থকে আল মুখতাসারুল কুদুরী নামকরন করা হয়েছে।কে লিখেছেন,তার নাম, ঠিকানা কিছুই জানা যায় না।অতএব,সংকলনকারীর নাম ঠিকানা বিহীন এই গ্রন্থখানাই হল হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাব।

আবুল হাসানের মৃত্যুর দিন যদি গ্রন্থ লেখার শেষ দিন ধরা যায় তাহলে গ্রন্থ লেখা হয় 428 হিজরিতে। হানাফি মাযহাব অর্থ ইমাম আবু হানীফার মাযহাব। ইমাম আবু হানীফার জন্ম 80 হিজরীতে, মৃত্যু 150 হিজরীতে। অর্থাত ইমাম আবু হানীফার মৃত্যু (428-150)=278 বৎসর পর গ্রন্থটি সংকলিত হয়।আবুল হাসানের সাথে ইমাম আবু হানীফার কোন দিন সাক্ষাৎ হয়নি।তিনি ইমাম আবু হানীফার কথাগুলি কার নিকট পেলেন তার কোন সূত্র বর্ননা করেন নাই।অতএব, ইমাম আবু হানীফার নামে বর্নিত কথাগুলির কোন সুত্র নাই। তেমন বহু কথা আছে যা ইমাম
আবু হানীফারও নয়,তাও হানাফি মাযহাব বলে পরিচয় দেয়া হয়।যেমন-আবু হানীফার মতে মাটি জাতীয় সমস্ত বস্তূ দ্বারা তায়াম্মুম জায়িয।

যেমন বালি,পাথর,চুন,সুরকী,সুরমা,হরিতাল[কুদুরী42পেজ] কথাটা ইমাম আবু হানীফার নামে বলা হল।কিন্তু ইমাম আবু হানীফার মৃত্যুর 212 বৎসর পর জন্ম নিয়ে কোন সূত্রে আবু হানীফার কথাটা পেলেন লেখক তা বললেন না।অতএব,কথাটা আবু হানীফার তা বিশ্বাস করার কোন প্রমান নেই।

কুদুরীতে লেখা আছে-"যদি কোন ব্যক্তির শরীরে বা কাপড়েএক দিরহাম পরিমান(এক তোলা অর্থাৎ রিয়াদ মিউজিয়ামে রক্ষিত দিরহামকে নমুনা ধরা হয়েছে) রক্ত,মলমুত্র,মদ লেগে থাকে তাহলে তা সহ নামায় পরা জায়েয হবে(কুদুরী 52পেজ)

মাসাঅলাটা কে রচনা করেছেন,তার নাম নাই। অথচ এটা কুরাআনে নাই,হাদীসে নাই,কার কথা তারও নাম নাই।আর এটাই হানাফী মাযহাব

হানাফী মাযহাব চালু হয়েছে ইমাম আবু হানীফার মৃত্যুর (428-150)=278 বৎসর পর।বিশ্বের সকল সহীহ হাদীস সংকলনের বহু বছর পর।

1:
পৃথিবীর সর্বপ্রথম সহীহ হাদীসের সংকলন হয় মুয়াত্তা মালিক সংকলিত হয় 179 হিজরীতে। আর কুদুরী লিপিবদ্ধ 428 হিজরীতে।অতএব,কুদুরী মুয়াত্তা মালিকের (428-179)=249 বৎসর পর রচিত হয়

2:
সহীহ আল বুখারীর (428-256)=172 বৎসর পর।

3:
সহীহ মুসলিমের (428-261)=167 বৎসর পর।

4:
সুনান আবু দাউদের (428-261)=167 বৎসর পর।

5:
সুনান তিরমিযীর (428-279)=149 বৎসর পর।

6:
সুনান ইবনু মাজার (428-273)=155 বৎসর পর।

7:
সুনান নাসাঈর (428-303)=125 বৎসর পর

অর্থাৎ সিহাহ সিত্তার সংকলনের বহু বছর পর আল মুখতাসারুল কুদুরী হানাফি মাযহাবের কিতাব লিপিবদ্ধ হয়।এই কিতাবে সিহাহ সিত্তার কোন বরাত নেই।

অতএব,হানাফী মাযহাবের সাথে হাদীসেরও কোন সম্পর্ক নাই,তেমন আবু হানীফারও কোন সম্পর্ক নাই। আবু হানীফার নামে সম্পুর্ন একটি বানানো মাযহাব।

কেউ বলতে পারেন সিহাহ সিত্তার পুর্বে যে সকল হাদীসের সংকলন ছিল আবুল হাসান কুদুরী তার বরাতে মাসআলাহ লিখেছেন অথবা ইমাম আবু হানীফা তার বরাতে মাসাঅলাহ আবিস্কার করেছেন। তার জবাবে বলব, তাহলে ওই সকল হাদীসের সংকলনের নাম ঠিকানা বলুন পরীক্ষা করে দেখা যাক।আমরাতো কিতাবে কোন হাদীসের সংকলনের নাম ঠিকানা পাই না। এসব বিষয় বিবেচনা গবেষণা করে ইসলামী গবেষকগণ এই ফিকহের কিতাবগুলোকে ইসলাম বিদ্বেষী বৃটিশদের ষড়যন্ত্র বলে ধারণা করছেন (মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে)

(
মুসলমানদের ফিকহ শাস্ত্র লিখিত হওয়া উচিত কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে গবেষণা করে। আর এভাবে কুরআন সুন্নাহ বিরুধী কথা লিখে মুসলিমদের বিভক্ত করা ছাড়া আর কোন ফায়দা হবে না)

হাদীস বিরোধী বক্তব্যের ব্যাপারে ইমামদের রায়:
মাযহাবীদের মধ্যে কিছু লোক দেখা যায় যারা ইমামদের তাক্কলীদ করে অর্থাৎ অন্ধ অনুসরন করে। তারা ইমামদের বক্তব্যকে আসমানী ওহীর মতো মানে। কোরআন-হাদিস বিরোধী কোনো রায় হলেও তাতে আমল করে। তাই সেই সব লোকদের জন্য হাদীস অনুসরনের ব্যাপারে ইমামদের মতামত এবং তাদের হাদীস বিরোধী বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপারে তাদের কয়েকটি উক্তি দেওয়া হল। ইনশাল্লাহ্‌! মাযহাবী ভাইয়েরা থেকে অনেক উপকারিত হবেন
ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর মূল কথা ছিলঃ-
"ইযা সহহাল হাদিসু ফা হুয়া মাজহাবা" অর্থ্যাত বিশুদ্ধ হাদিস পেলে সেটাই আমার মাজহাব বা মতামত। (/৬৩ ইবনু আবিদীন এর হাশিয়া, পৃঃ ৬২ ছালিহ আল-ফাল্লানীর, /৪৬ শামী)
ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল হে শায়খ, যদি এমন সময় আসে যখন আপনার কথা কোন সহীহ হাদিসের বিপরীতে যাবে তখন আমরা কি করব?
তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তখন তোমরা সেই সহীহ হাদিসের উপরই আমল করবে এবং আমার কথা প্রাচীরে/দেয়ালে নিক্ষেপ করবে
=> ১৩৫ হিজরিতে জন্মগ্রহন কারী ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর বক্তব্য হলো,
তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ বিরোধী কিছূ পাবে তখন আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত অনুসারে কথা বলবে। আর আমি যা বলেছি তা ছেড়ে দিবে। (/৪৭/ আল হারাবীর, / খত্বীব, ১৫// ইবনু আসাকির, /৩৬৮ ইবনু কাইয়িম, ১০০ পৃঃ ইহসান ইবনু হিব্বান)
=> ৯৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ কারী ইমাম মালেক রহঃ এর বক্তব্যও একই
ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন, আমি নিছক একজন মানুষ। ভূলও করি শুদ্ধও বলি। তাই তোমরা লক্ষ্য করো আমার অভিমত/মতামত/মাজহাব এর প্রতি। এগুলোর যতটুকু কোরআন সুন্নাহ এর সাথে মিলে যায় তা গ্রহণ করো আর যতটুকু এতদুভয়ের সাথে গরমিল হয় তা পরিত্যাগ করো। (ইবনু আবদিল বর গ্রন্থ (/৩২)
=> ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহনকারী ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ ছিলেন ১০ লক্ষ হাদিসের সংগ্রহ কারী। সবচেয়ে বেশী হাদিস উনার মুখস্থ ছিল এবং উনার সংগ্রহে ছিল। উনার লিখিত গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ মাত্র ২৩০০০ এর মতো হাদিস লিপিবদ্ধ আছে
*আবু হানীফা (রহ) এর মূল কথা:
) যখন হাদীস সহীহ হবে, তখন সেটাই আমার মাযহাব অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (ইবনুল আবেদীন /৬৩; রাসমুল মুফতী /; ঈক্কামুল মুফতী ৬২ পৃষ্ঠা)
) কারো জন্য আমাদের কথা মেনে নেওয়া বৈধ নয়; যতক্ষন না সে জেনেছে যে, আমরা তা কোথা থেকে গ্রহন করেছি। (হাশিয়া ইবনুল আবেদীন /২৯৩ রাসমুল মুফতী ২৯, ৩২ পৃষ্ঠা, শারানীর মীথান /৫৫; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন /৩০৯)
) যে ব্যাক্তি আমার দলিল জানে না, তার জন্য আমার উক্তি দ্বারা ফতোয়া দেওয়া হারাম। (আন-নাফিউল কাবীর ১৩৫ পৃষ্ঠা)
) আমরা তো মানুষ। আজ এক কথা বলি, আবার কাল তা প্রত্যাহার করে নিই। – ()
) যদি আমি এমন কথা বলি যা আল্লাহর কিতাব রাসুলের (সা) হাদীসের পরিপন্থি, তাহলে আমার কথাকে বর্জন করো। (দেওয়ালে ছুড়ে মারো) (ঈক্কাবুল হিমাম ৫০ পৃষ্ঠা)
ইমাম মালেক (রহ) এর মূল কথা:
) আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কথা ভুল হতে পারে আবার ঠিকও হতে পারে। সুতরাং তোমরা আমার মতকে বিবেচনা করে দেখ। অতঃপর যেটা কিতাব সুন্নাহর অনুকুল পাও তা গ্রহন কর। আর যা কিতাব সুন্নাহর প্রতিকুল তা বর্জন করো। (জানেউ বায়ানিল ইলম /৩২, উসুলুল আহকাম /১৪৯)
) রাসুলুল্লাহ (সা) এর পর এমন কোনো ব্যাক্তি নেই যার কথা কাজ সমালোচনার উর্ধে। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা) সমালোচনার উর্ধে। (ইবনু আবদিল হাদী, ১ম খন্ড, ২২৭ পৃষ্ঠা, আল ফতোয়াআসসাবকী, ১ম খন্ড ১৪৮ পৃষ্ঠা, উসুলুল আহকাম ইবনু হাযম, ষষ্ঠ খন্ড ১৪৫১৭৯ পৃষ্ঠা)
) ইবনু ওহাব বলেছেন, আমি ইমাম মালেককের উয়ব মধ্যে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার বিষএ এক প্রশ্ন করতে শুনেছি। তিনি বলেন লোকদের জন্য এটার প্রয়োজন নেই। ইবনু ওহাব বলেন, আমি মানুষ কমে গেলে তাঁকে নিরিবিলে পেয়ে বলিতাতো আমাদের জন্য সুন্নাহ। ইমাম মালেক বলেন, সেটা কি? আমি বললাম, আমরা লাইস বিন সাদ, ইবনু লোহাইআ, আমর বিন হারেস, ইয়াবিদ বিন আমার আল-মা আফেরী, আবু আবদুর রহমান আল হাবালী এবং আল মোস্তাওরাদ বিন শাদ্দাদ আল কোরাশী এই সুত্র পরম্পরা থেকে জানতে পেরেছি যে, শাদ্দাদ আল কোরাশী বলেন, আমি রাসুল (সা) কে কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে দুই পায়ের আঙ্গুল খেলাল করতে দেখেছি। ইমাম মালেক বলেন, এটা তো সুন্দর হাদীস। আমি এখন ছাড়া আর কখনো এই হাদীসটি শুনিনি। তারপর যখনই তাকে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই তাঁকে পায়ের আঙ্গুল খেলাল করার আদেশ দিতে আমি শুনেছি। (মোকাদ্দামা আল জারাহ ওয়াত তা দীল- ইবনু হাতেমঃ ৩১- ৩২ পৃষ্ঠা)
ইমাম শাফেয়ী এর মূল কথা::-
) হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। (মাজমু /৬৩; শারানী /৫৭)
) আমি যে কথাই বলি না কেন অথবা যে নীতিই প্রনয়ন করি না কেন, তা যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর নিকট থেকে বর্ণিত (হাদীসের) খিলাপ হয়, তাহলে সে কথাই মান্য, যা রাসুল (সা) বলেছেন। আর সেটাই আমার কথা। (তারীখু দিমাশ্; ইলামুল মুওয়াক্কিঈন /৩৬৬,৩৬৪)
) নিজ ছাত্র ইমাম আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন) হাদীস রিজাল সম্বন্ধে তোমরা আমার চেয়ে বেশি জানো। অতএব হাদীস সহীহ হলে আমাকে জানাও, সে যাই হোক না কেন; কুকী, বাসরী অথবা শামী। তা সহীহ হলে সেটাই আমি আমার মাযহাব (পন্থা) বানিয়া নেবো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৪-৯৫ পৃষ্ঠা; হিলয়াহ /১০৬)
) আমার পুস্তকে যদি আল্লাহর রাসুল (সা) এর সুন্নাহের খেলাপ কে কথা পাও, তাহলে আল্লাহর রাসুল (সা) এর কথাকেই মেনে নিও এবং আমি যা বলেছি তা বর্জন করো। (নাওয়াবীর মাজমু /৬৩; ইলামূল মুওয়াক্কিঈন /৩৬১)
) যে কথাই আমি বলি না কেন, তা যদি সহীহ সুন্নাহর পরিপন্থি হয়, তাহলে নবী (সা) এর হাদীসই অধিক মান্য। সুতরাং তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না। (হাদীস সুন্নাহর মুল্যমান ৫৪ পৃষ্ঠা)
) নবী (সা) থেকে যে হাদীসই বর্ণিত হয়, সেটাই আমার কথা; যদিও তা আমার নিকট থেকে না শুনে থাকো। (ইবনু আবী হাতীম ৯৩-৯৪)
ইমাম আহমাদ এর মূল কথা::
) তোমরা আমার অন্ধানুকরন করো না, মালেকেরও অন্ধানুকরন করো না। অন্ধানুকরন করো না শাফেরীর আর না আওয়ারী ষত্তরীব বরং তোমরা সেখান থেকে তোমরা গ্রহন কর যেখান থেকে তারা গ্রহন করেছেন। (ইলামুল মোয়াক্কিঈন /৩০২)
) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা) এর হাদীস প্রত্যাখ্যান করে, সে ব্যক্তি ধ্বংসোন্মুখ। (ইবনুল জাওযী ১৮২ পৃষ্ঠা)
) আওযাঈ; ইমাম মালেক ইমাম আবু হানীফার রায় তাদের নিজস্ব রায় বা ইজতিহাদ। আমার কাছে এসবই সমান। তবে দলিল হল আসার অর্থাৎ সাহাবী তাবেঈগনের কথা। (ইবনু আবদিল বার-আল-জামে, খন্ড, ১৪৯ পৃষ্ঠা) ইমামদের এই সকল বক্তব্য জানার পর আমরা বলতে পারি প্রকৃতই যারা ইমামদের ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন, মান্য করেন তারা ইমামদের কথা অনুযায়ী চলবেন এবং সহীহ হাদীসকেই নিজের মাযহাব বানাবেন। তাক্কলীদ করবেন না। সরাসরী সেখান থেকে গ্রহন করবেন যেখান থেকে ইমামরা করেছেন অর্থাৎ সরাসরী হাদীস কোরয়ান থেকে। ইমামরা কোনো বিষয়ে ভুল ফতোয়া (সহীহ হাদীস তাঁদের কাছে না পৌছানোর কারনে) দিয়ে থাকলে তা প্রত্যাখ্যান করা এবং সহীহ হাদীসের উপর আমল করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলাম বোঝার গ্রহীহ হাদীসের উপর আমল করার তৌফিক দিন। আমীন!

তাহলে দেখা যাচ্ছে যেসকল ইমামই কোরআন সহীহ হাদিস মেনে নিতে বলেছেন। কিন্তু কেউ যদি বলেন মাজহাব মানতে তাহলে এই মুসলিম জাতি কখনো এক হতে পারবে না। সকলে দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। যেমন হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী, মালেকী, আহলে হাদিস, আহলে কোরআন, শিয়া, সুন্নী, কুর্দি, দেওবন্দী, বেরলভী ইত্যাদি
উপরের যতগুলো গ্রুপে মুসলিমরা ভাগ হইছে তার একটাই কারণ মাজহাব বা মতামতকে তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ করা। প্রত্যেক গ্রুপই তাদের ইমামদের, বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট
এখন দেখেন যারা ইমামদের তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করে নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে যেমন হানাফী, শাফেঈ, আহলে হাদিস ইত্যাদি এবং কোরআন সহীহ হাদিস ত্যাগ করে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ কি বলেছেনঃ-
(হে নবী) আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। [সূরা রুম-৩১-৩২
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের মুশরিক বলে আখ্যায়িত করেছেন যারা কোরআন সহীহ হাদিস ছেড়ে ইমামদের আলেমদের বুজুর্গদের তাকলীদ করে তাদের। যেমন শীয়ারা। তারা তাদের বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে কঠোরভাবে মানে। বুঝতে চায় না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা
যারা দ্বীনকে খন্ড বিখন্ড করে, দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে (হে নবী) আপনার কোন সম্পর্ক নাই। [সূরা আনআম-১৫৯
এই আয়াতে যারা দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে নবীর সম্পর্ক না থাকার কথা বলা হয়েছে। যাদের সাথে নবীজি সাঃ এর সম্পর্ক নাই তাদের সাথে আমাদের মুসলিমদেরও কোন সম্পর্ক নাই
মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও কেউ কেউ যদি দলে দলে বিভক্ত হন, ইমামদের তাকলীদ করেন, তাহলে তাদের সাথেও নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক থাকবে না। আর যার সাথে নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক নাই, তার সাথে আমাদের সম্পর্কের তো প্রশ্নই উঠে না। যারা কোরআন সহীহ হাদিস মেনে নিতে রাজি আছেন তারা আমাদের মুসলিমদের দ্বীনি ভাই আর যদি কেউ না মেনে নেন তাহলে এই আয়াতটা তাদের জন্য -
যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ (কোরআন হাদিস অমান্যের মাধ্যমে) করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান। [সূরা নিসা-:১১৫


ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) কি সত্যিই তাবেঈ ছিলেন ???

অথবা

চার ইমাম কি সাহাবায়ে কিরামকে দর্শন করেছেন ???


দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে আমাদের সমাজে অনেক আলেম-উলামা-সাধারন অসাধারন ব্যক্তিগন ইমামদের নামে অনেক মিথ্যা রচনা করে থাকেন।

ঠিক তেমনি একটি বহুল প্রচারিত মিথ্যা কথাচার ইমামের অনেকে সাহাবায়ে কিরামকে দর্শন করে ধন্য হয়েছিলেন।কথাটা সম্পূর্ন মিথ্যা। চার ইমাম হলেন ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহ্মাদ বিন হাম্বল। ইমাম আবূ হানিফা ইমাম মালেক সমকালীন।

কিন্তু কেউ সাহাবাদের মধ্য হতে কাউকে দেখেন নাই, কারো সাথে সাহাবার সাক্ষাত হয় নাই।

ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল খতীব বলেন-

১।. ইমাম আবু হানীফা জীবিত অবস্থায় চার জন সাহাবা বেঁচে ছিলেন।

(
) আনাস বিন মালিক (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৯১ হিজরী) বসরাতে।
(
) আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৮৭ হিজরী) কুফাতে।
(
) সাহাল বিন সায়াদ সায়েদী (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৯১ হিজরী) মদীনাতে।
(
) আবু তোফায়েল আমের বিন অসেলা (রাঃ) (মৃত্যুঃ ১১০ হিজরী) মক্কাতে।

ইমাম আবূ হানীফা কারো সাথে সাক্ষাত করেন নাই এবং কারো নিকট হতে হাদীসও শিক্ষা করেন নাই। (আল আক্মাল ফি আসমাউর রেজাল মায়া মেশকাত পৃঃ ৬২৪)

ইমাম আবু হানীফার জন্ম ৮০ হিজরী মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে।

(
) আনাস বিন মালিক (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯১-৮০)=১১ বৎসর। এই ১১ বৎসর সাহাবা আনাস বিন মালিকের (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।

(
) আব্দুল্লাহহ বিন আবী আওফা (রাঃ)যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯৮৭-৮০)= বৎসর। সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।

(
) সাহাল বিন সায়াদ সায়েদী (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯১-৮০)=১১ বৎসর।

() আবু তোফায়েল আমের বিন অসেলা (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (১১০-৮০)=৩০ বৎসর। আবু তোফায়েল (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হতে পারত, কিন্তু তিনি ইমাম আবু হানিফা সাক্ষাত করেন নাই।

২। ইমাম মালেকের (রহঃ) কর্মময় সময় বেঁচেছিলেন মাত্র একজন সাহাবী, যার নাম আবু তোফায়েল (রাঃ). তিনি মক্কায় বসবাস করতেন। তিনি যখন মারা যান তখন ইমাম মালেকের বয়স (১১০-৯৫)= ১৫ বৎসর। ইমাম মালেক মদীনা হতে হজ্জের কাফেলার সাথে রওনা করেন সাহাবার সাথে সাক্ষাত হজ্জের উদ্দেশ্যে। তারা পথিমধ্যে থাকা অবস্থায় আবু তোফায়েল (রাঃ) মারা যান। ইমামের সাথে আবু তোফায়েল (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হয় নাই।

৩।. ইমাম শাফেয়ীর জন্ম ১৫০ হিজরীতে। অতএব, সকল সাহাবাগণ তার জন্মের পূর্বে মারা যান।

৪।. ইমাম আহ্মাদ বিন হাম্বল জন্ম গ্রহণ করেন ১৬১ হিজরীতে। তার সকল সাহাবাগণ তার জন্মের পূর্বে মারা যান।
আশা করি বিষয়টি সবার কাছে তুলে ধরতে পেরেছি এবং সবাই বুঝতে পেরেছেন। 


সহীহ দলীল ছাড়া ফতওয়া গ্রহণ করা হারাম তার প্রমাণঃ

মহান আল্লাহপাক তাঁর পবিত্র কোরআনে বলেন, “আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেসা কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সূরা নাহাল ৪৩-৪৪)
ইয়াহুদি নাসারগণ তাদের আলেম দরবেশগণকে আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে- (সূরা আত-তওবাহ ৩১ আঃ)
অর্থাৎ তাদের আলেম দরবেশগণ যাই বলে তা- তারা অন্ধভাবে গ্রহণ করে। তারা জানতে চায়না যে উল্লেখিত বিষয়ে আল্লাহর কি হুকুম এবং তার রাসূলের কি হুকুম।
ইমাম ইবনে হযম (রহঃ) লিখেছেন, তাকলীদ অর্থাৎ অন্ধ অনুসরণ হারাম- (নজবুল কাফিয়াহ গ্রন্থে দেখুন) ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যতীত অন্য সকলের কথা সম্বন্ধে জিজ্ঞেসাবাদ করা যাবে। বিনা বিচারে দলিলে কারো উক্তি গ্রহণীয় হবে না- (হুজ্জাতুল্লাহ) ইমাম আবূ ইউসুফ, যোফার আকিয়াহ বিন যয়দ হতে বর্ণিত- তারা বলতেন যে, কোন লোকের জন্য আমাদের কথা দ্বারা ফতোয়া দেয়া হালাল নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোথা
হতে বলেছি তা তারা অবগত না হবে। (ইকদুল ফরিদ গ্রন্থের ৫৬ পৃঃ)


সুতরাং- পরিশেষে বলা যায় যে, আমরা দলে দলে বিভক্ত না হয়ে, কুরআন ও হাদিসের সহিহ দলিল দ্বারা জিবনকে পরিচালিত করব ইনশাআল্লাহ। আর যে ব্যাক্তি তার দ্বীন সর্ম্পকে অজ্ঞ ও মূর্খ সে যেন হক্বানী দ্বীনি আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করে। যেমন:- আল্লাহ তায়ালা বলেন:فا سئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون তোমাদের কোন বিষয়ে জানা না থাকলে আহলে ইলমদের নিকট জিজ্ঞাসা কর  সুরাআল আম্বিয়াঃ আয়াত শরিফ ৭, ও সুরা আন নাহালঃ আয়াত শরিফ ৪৩,

সমাপ্ত


   বি:দ্র: আসুন, পীর মুরীদি বর্জন করি, কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক জীবন গড়ি।

 (প্রচারে:-ফ্রেন্ডস কম্পিউটার সেন্টার)মাধাইয়া বাজার হাইস্কুল মার্কেট, মাধাইয়া, চান্দিনা, কুমিল্লা।

বান্ধিলাম পিরীতের ঘর (Bandilam Piriter Ghor) Momotaz Hit Song-2020

বান্ধিলাম পিরিতের ঘর, মমতাজের হিট গান ভিডিও লিংক: https://youtu.be/bSIriPhUutM